প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে স্কটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বাদরদি গ্রামের সন্তান ফয়ছল হোসেন চৌধূরী এমবিই এমএসপি।
পরিবারের সাথে ফয়ছল চৌধুরী
তিনি মরহুম আলহাজ্ব গোলাম রব্বানী চৌধূরী এবং রুকেয়া রব্বানী চৌধূরী দম্পত্তির বড় ছেলে। তাঁর পরিবার ১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে চলে আসেন এবং একই বছরের ডিসেম্বরে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
পরিবারের সাথে ফয়ছল চৌধুরী
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে, অসুস্থ বাবার ব্যবসার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ফয়ছল চৌধূরী। তিনি শুধু ব্যবসাটি সফলভাবে পরিচালনা করেননি, বরং তা সম্প্রসারণ করে আজ যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ জুড়ে ক্যাটারিং, আতিথেয়তা, অর্থ ও রিয়েল এস্টেট খাতে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।
শুধু ব্যবসায়ী নন, তিনি যুক্তরাজ্যের একজন বিশিষ্ট কমিউনিটি কর্মীও। সামাজিক ন্যায়বিচার, কমিউনিটি সম্পর্ক উন্নয়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি একাধিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত।
২০১৭ সালে ওয়েস্টমিনস্টার সংসদ নির্বাচনে লেবার পার্টির হয়ে এডিনবার্গ সাউথওয়েস্ট আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর, অবশেষে, ২০২১ সালে তিনি ইতিহাস তৈরি করেন—স্কটিশ পার্লামেন্টের (হলিরুড) প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য (এমএসপি) হিসেবে নির্বাচিত হন।
এছাড়াও, ফয়ছল হোসেন চৌধূরী হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের একমাত্র পুরুষ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সংসদ সদস্য, যিনি আজ চারজন বিশিষ্ট নারী এমপির সঙ্গে (রুশনারা আলী, আফসানা বেগম, রূপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিক) ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিকে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছেন। বর্তমানে তিনি স্কটিশ পার্লামেন্টে ছায়া মন্ত্রী (সংস্কৃতি, ইউরোপ ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন)।
২০২১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বৈষম্য দূরীকরণ, জনসেবার সুরক্ষা, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কমিউনিটি নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তিনি সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন।
স্কটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার ফয়ছল চৌধুরী বলেন আমার জন্য, এটি কখনোই শুধু একটা পদ নয়। এটি একটি দায়িত্ব—স্কটল্যান্ডের প্রতিটি নাগরিকের কথা ভাবার এবং বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করার।
ছেলে মেয়ে এবং স্ত্রীর সাথে ফয়ছল চৌধুরী
রাজনীতি, ব্যবসা ও সমাজসেবার পাশাপাশি তিনি একজন নিবেদিত পরিবারপ্রেমী মানুষ। তাঁর স্ত্রী মির্জা তাহমিনা ফয়ছল চৌধূরী (মনি) এবং তাঁদের দুই সন্তান—
• ইকরাম হোসেন চৌধূরী, যিনি বর্তমানে একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA)।
• মাদিহা জান্নাত চৌধূরী, যিনি ২০২১ সালে স্কটিশ ইয়ুথ পার্লামেন্টের সদস্য (MSYP) নির্বাচিত হয়ে তরুণ নেতৃত্বের উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পথচলা—ফয়ছল হোসেন চৌধূরী এমবিই এমএসপি প্রমাণ করেছেন যে কঠোর পরিশ্রম, অঙ্গীকার ও কমিউনিটির প্রতি ভালোবাসা দিয়ে ইতিহাস লেখা সম্ভব।
আজ তিনি শুধু গ্রেটার সিলেট নয়, সমগ্র বাংলাদেশের গর্ব। লাল-সবুজের পতাকা উঁচু করে ধরেছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। তাঁর জীবনগাথা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে—যারা বিশ্বাস করে প্রতিনিধিত্ব, ন্যায়বিচার এবং কমিউনিটি কর্মের শক্তিতে।