পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশি যুগল এখন বিশ্বসেরা পর্ন তারকা!
বাংলাদেশে বসে বিশ্বের অন্যতম বড় পর্ন ওয়েবসাইটে শীর্ষস্থান দখল করেছেন এক বাংলাদেশি নারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে “বাংলাদেশের এক নম্বর মডেল” পরিচয় দিলেও, বাস্তবে তিনি ও তার সঙ্গী আন্তর্জাতিক পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
‘বি’ (ছদ্মনাম) নামে পরিচিত ওই নারী ২০২৪ সালের মে মাসে প্রথম ভিডিও প্রকাশ করেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে তার ১১২টি ভিডিও ২৬৭ মিলিয়নের বেশি ভিউ পেয়েছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে তিনি বিশ্বব্যাপী পারফর্মারদের মধ্যে অষ্টম স্থানে আছেন।
তার সঙ্গী ‘এ’ (ছদ্মনাম) বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা। তারা একসঙ্গে পর্ন ভিডিও তৈরি ও প্রচার করেন এবং নিজেদের পরিচয় গোপন না রেখেই মুখ উন্মুক্ত রাখেন যা বাংলাদেশের জন্য এক নজিরবিহীন ঘটনা।
সংগঠিতভাবে চলছে অনলাইন কার্যক্রম
দ্য ডিসেন্টের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বি ও এ শুধু এক প্ল্যাটফর্মেই নয়, একাধিক পর্ন ওয়েবসাইটে ভিডিও প্রকাশ করছেন। এছাড়া তারা টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন।
২০২৪ সালের মে মাসে তাদের নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলা হয়, যেখানে প্রায় ২,০০০ সদস্য রয়েছে। সেখানে নতুন ভিডিওর লিংক, আয়ের স্ক্রিনশট ও রেফারেল অফার প্রকাশ করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৭০টি ভিডিও লিংক দ্য ডিসেন্ট সংগ্রহ করেছে।
একাধিক স্ক্রিনশটে দেখা যায়, এক বছরে তারা প্রায় ১৫,৭০০ ডলার (২০ লাখ টাকারও বেশি) আয় করেছেন। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে নিজেদের “পর্ন ক্রিয়েটর” হিসেবে পরিচয় দিয়ে খোলাখুলিভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
গ্রাম থেকে বিলাসবহুল জীবনে
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, এ তৃতীয় শ্রেণি এবং বি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই যুগল এখন অনলাইনে বিপুল অর্থ ও বিলাসী জীবনযাপনের ছবি শেয়ার করছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “এ” ও তার পরিবার বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এবং এলাকায় কুখ্যাত। তার বাড়ি এখন প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে, আর পরিবারটি নিয়মিত বসবাস করে না।
অন্যদিকে, বি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বাসিন্দা। তার বাবা-মা জানান, তারা গত এক বছর ধরে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। বি-এর শ্বশুর বলেন, “সে একদিন ঘর ছেড়ে চলে যায়, আট বছর ধরে ফেরেনি।”
তরুণদের টানছে অর্থের প্রলোভন
তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে অনেক তরুণ মন্তব্য করে জানিয়েছেন, তারাও এই ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হতে চান। “আমরাও ভিডিও বানাতে চাই,” এমন বার্তা প্রায়ই দেখা যায়।
এ নিজেও নতুনদের যুক্ত করতে উৎসাহ দিচ্ছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, “নতুন ক্রিয়েটর এড করো, ৫৫ ডলার ফ্রি।” সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করলে, এ জানান, “চিন্তা করবেন না, সব ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।”
আইনের অন্ধকারে নতুন নেটওয়ার্ক
২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে এ ধরনের কাজের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও, এই যুগল দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চলছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. রাসেল বলেন, “আমরা এই বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি।” বিটিআরসি কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে বসে আন্তর্জাতিক পর্ন নেটওয়ার্ক পরিচালনা এ যেন এক অন্ধকার জগতের দরজা, যেখানে আইনের আলো এখনও পৌঁছায়নি।
অবশেষে সোমবার সকালে তাদের গ্রেফতার করে পুলিম, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান। তিনি জানান, বান্দরবান থেকে সিআইডির একটি বিশেষ টিম অভিযানে তাদের গ্রেফতার করে।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, “ওই দম্পতি বিদেশি একটি ওয়েবসাইটে নিয়মিত পর্নো কনটেন্ট আপলোড করতেন। তাদের পরিচালিত ওয়েবটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্নো সাইটগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।”
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এই যুগল বাংলাদেশে বসেই ভিডিও ধারণ, সম্পাদনা ও অনলাইনে আপলোড করতেন। এর মাধ্যমে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২’ অনুযায়ী পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, ধারণ ও বিতরণ একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই দম্পতি শুধু নিজেরাই অবৈধভাবে এমন কনটেন্ট তৈরি করছিলেন না, বরং অন্যদেরও একই পথে উৎসাহিত করছিলেন যা দেশে বসে একটি ‘অনলাইন পর্নো নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার ইঙ্গিত দেয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি অনলাইন অনুসন্ধানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম “দ্য ডিসেন্ট” এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই যুগলের কার্যক্রম প্রকাশ করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ডিজিটাল ডিভাইস জব্দের পর বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে তদন্ত করা হবে।