হবিগঞ্জ শহরে চাঞ্চল্যকর জামায়াত নেতা ও ফার্মেসী ব্যবসায়ী মহিবুর রহমান চৌধুরী হত্যা মামলায় প্রধান আসামি শফিকুল আলমকে আমৃত্যু এবং তার আপন ভাইসহ ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ইউসূফ এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন প্রধান আসামি শফিকুল আলমের ছোট ভাই শহিদুল আলম আকিক, বানিয়াচং উপজেলার মকা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, শেবুল মিয়া, রুবেল মিয়া, শামিম আহমেদ, আব্দুল মুকিত, আলমগীর, শামছুল, ছরফুল, মকছুদ ওরফে ছাও মিয়া, তারা মিয়া, রতিশ দাস, ছায়েদ মিয়া ও নাহিদ মিয়া। নিহত মহিবুর ও দণ্ডপ্রাপ্তদের গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার মকা গ্রামে।
অন্যদিকে, বুলবুল ও জুয়েলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পেয়েছেন। মামলার অন্য আসামি আকবর হোসেন, শাহজাহান ও আব্দুল কাইয়ুম রায় ঘোষণার আগেই মারা যাওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায় হবিগঞ্জ পুরান মুন্সেফী এলাকার বাসিন্দা মহিবুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে মকা গ্রামের চাচাতো ভাই শফিকুল আলম চৌধুরী ও তার লোকজনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। ২০১৩ সালের ১৭ জুন রাত সাড়ে আটটার দিকে হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফি বড় পুকুর এলাকায় মহিবুর রহমানকে একা পেয়ে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই মুজিবুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ বারো বছরেরও অধিক সময় পর ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত গতকাল মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গুলজার খান বলেন, “মহিবুর রহমান চৌধুরী হত্যাকাণ্ডটি ছিল একটি আলোচিত ঘটনা। শহরের আবাসিক এলাকায় প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রায়ে আমরা আংশিক সন্তুষ্ট। রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
নিহতের ছোট ভাই মাহফুজ চৌধুরী বলেন, “এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। একজন জীবন্ত মানুষকে এভাবে কুপিয়ে হত্যার পরও এটি কাঙ্ক্ষিত রায় নয়। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”
এদিকে রায় ঘোষণার পর আসামীপক্ষ উত্তেজিত হয়ে বাদীপক্ষের ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শাহাবুদ্দিন শাহিন বলেন, রায় ঘোষণার পর বাদীপক্ষ উত্তেজিত হয়ে আসামিদের ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হয়। আমরা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিই। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।