Connect with us

সম্পাদকীয়

নারী নয়, নিজের মিশনকে ভালোবাসো

| নুর হোসেন সোহেল

Published

on

ছবি | নুর হোসেন সোহেল ( বাংলা মিরর)

আমরা এমন এক সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি, সামাজিক মাধ্যমের অতিপ্রবাহ, এবং ভোগবিলাসের সংস্কৃতি পুরুষদের মানসিক শক্তি ও লক্ষ্যভেদ ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আজ নিজেকে আবিষ্কার করছে হতাশা, অলসতা এবং উদ্দেশ্যহীনতায় নিমজ্জিত এক জীবনে। এর পেছনে অন্যতম বড় কারণ—আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব, বিশেষ করে যৌন আসক্তির প্রতি অতি নির্ভরতা।

পুরুষের সফলতা শুধুমাত্র বাহ্যিক শক্তি, ডিগ্রি বা অর্থে নির্ধারিত হয় না—বরং তা নির্ধারিত হয় তার আত্মসংযম ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে। আত্মনিয়ন্ত্রণ এমন একটি গুণ, যা না থাকলে পুরুষ যতই প্রতিভাবান হোক না কেন, তার সম্ভাবনা অকালেই ঝরে পড়ে।

ইতিহাসের দিকে তাকালেই আমরা দেখি, মহান পুরুষেরা ছিলেন নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মসংযমের মূর্ত প্রতীক। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ৩০ বছরের মধ্যে দুনিয়া জয় করেননি নারীসঙ্গ বা ভোগের পেছনে সময় নষ্ট করে; মোহাম্মদ আলী তার বক্সিং ক্যারিয়ারে যৌনতা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন যেন শক্তি ও মনোযোগ সংরক্ষণ করা যায়। এলন মাস্কের মতো আধুনিক সফল উদ্যোক্তারা জানেন, একটি মহৎ মিশন পূরণ করতে গেলে নিজেকে ভোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

আধুনিক সময়ে বিপদ আরও ঘনীভূত হয়েছে। তরুণদের অনেকেই পর্নোগ্রাফি, ফ্লার্টিং, এবং সস্তা সম্পর্কের মোহে নিজেদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করছে। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল স্ক্রলে কাটছে, অথচ সেই সময়টুকু যদি নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্যয় করা হতো, তাহলে তারা নিজেরাই হতো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

এখানে একটি শক্তিশালী হাদীস স্মরণ করা যায়—
“জ্ঞান অর্জন কর, প্রয়োজনে চীন দেশে গিয়েও।”
(অর্থাৎ শিক্ষা ও আত্মোন্নয়নের জন্য যত দূরেই যেতে হয়, তত দূরেই যাও, কারণ তা মহান উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক।)
এই হাদীসের শিক্ষা থেকে বুঝা যায়, ইসলামও আমাদের আহ্বান জানায় উচ্চতর মিশনের জন্য আত্মত্যাগে প্রস্তুত হতে। নারীসঙ্গ বা ভোগ কখনো সেই মিশনের অন্তরায় হতে পারে না।

আসলে নারীর প্রতি আকর্ষণ পুরুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, কিন্তু যখন সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা ধ্বংস ডেকে আনে। ইতিহাস বলছে—সামসন ধ্বংস হয়েছিলেন ডেলিলার কারণে, সলোমন হারিয়েছিলেন জ্ঞান ও স্থিতি, টাইগার উডস ও বিল ক্লিনটনের মতো সফল মানুষও পড়েছেন গভীর সংকটে যৌন স্ক্যান্ডালের কারণে।

একজন প্রকৃত পুরুষ কখনোই তার কামনার দাস হতে পারে না। নারীরা সম্মান করে সেই পুরুষকে যার আছে লক্ষ্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও চরিত্র। যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সে সমাজ বা পরিবারকে নেতৃত্ব দিতে পারে না।

আমাদের সমাজে আজ সবচেয়ে জরুরি হলো আত্মসংযমের শিক্ষা। তরুণদের শেখাতে হবে যে সস্তা আনন্দের পেছনে নয়, তারা যেন সময় ব্যয় করে নিজের দক্ষতা, শিক্ষা, শরীর, এবং চারিত্রিক উন্নয়নে। আজ যে সময় তারা নষ্ট করছে ভোগের পেছনে, সেই সময়টুকু কাজে লাগালে আগামী দশকে তারা দাঁড়াতে পারবে নেতৃত্বের মঞ্চে।

তাই হ্যাঁ, নারী নয়—নিজের মিশনকে ভালোবাসো।
কারণ একমাত্র সেই পুরুষই সফল হবে, যে নিজের ভেতরের দুর্বলতা জয় করতে পারে।
ভোগ নয়, সংযমই পুরুষের প্রকৃত শক্তি।

For Any Inquiry

dailybanglamirror@gmail.com

স্বত্ব © ২০২২ - ২০২৫ বাংলা মিরর | সম্পাদক : মোঃ খায়রুল ইসলাম সাব্বির