স্বপ্ন ছিল একদিন ইতালিতে পৌঁছে ভাগ্যের চাকা ঘোরাবেন। পরিবারের অভাব-অনটন দূর করে মুখে হাসি ফোটাবেন মা-বাবার। কিন্তু সেই স্বপ্নই যেন তলিয়ে গেছে লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরের নীল জলে। হবিগঞ্জের ৩৫ তরুণ ইতালি যাওয়ার পথে ১৬ দিন ধরে নিখোঁজ। তাদের জীবিত না মৃত—তা এখনো কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
তবু থেমে নেই কান্না। প্রতিটি পরিবারে চলছে আহাজারি, বুকভাঙা হাহাকার।
জানা গেছে, গত ৩০ অক্টোবর লিবিয়া প্রবাসী আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের চিহ্নিত দালাল হাসান আশরাফ ওরফে সামায়ূন মোল্লার মাধ্যমে ওই ৩৫ যুবক লিবিয়ার ত্রিপলি বন্দর থেকে নৌকায় চড়ে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন, বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা তলাবপাড়ার আলফাজ মিয়া রনি, মোজাক্কির আহমেদ, সিয়াম জমাদার, মিজান আহমেদ; শ্রীমঙ্গলকান্দির সাইফুল ইসলাম বাবু, জুবাঈদ মিয়া; আজমিরীগঞ্জের ইমন, পারভেজ, রফিকুল ইসলাম পবলু, হাবিবুর রহমান, সাব্বির, মাহি ওরফে রাহুল, উজ্জ্বল, পিন্টু, নোয়াগড় গ্রামের মোক্তাকির ও রবিউল।
এছাড়াও হবিগঞ্জ সদর ও বানিয়াচংয়ের বিভিন্ন গ্রামের আরও কয়েকজন রয়েছেন।
শুধু পশ্চিমভাগ গ্রাম থেকেই নিখোঁজ হয়েছেন ছয় যুবক। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৭ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিয়েছিলেন দালাল হাসান আশরাফ।
পশ্চিমভাগ গ্রামে সরেজমিন গেলে দেখা যায় পুরো গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া।
নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে বাতাস। কেউ ছেলের ছবি বুকে নিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন, কেউ আবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
নিখোঁজ সাব্বিরের বাবা আব্দুল ওয়াহেদ জানান, “তিন মাস আগে হাসান মোল্লার মাধ্যমে লিবিয়া পাঠাই। পরে বলে, ছেলেকে ইতালি পাঠানো হবে। এজন্য বাড়ির জমি, গরু বিক্রি, এনজিও থেকে ঋণ সব মিলিয়ে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন ছেলেটার কোনো খবর নেই।”
তিনি সরকারের কাছে তার ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের আকুতি জানান।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ৩৫ জন যুবক নিখোঁজ হওয়ার পরও দালাল হাসান আশরাফ ওরফে সামায়ূন মোল্লা তার মানবপাচার চক্রের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, তার সহযোগী হিসেবে পশ্চিমভাগ গ্রামের আব্দুল মুকিত মাস্টার ও মিজানুর রহমানসহ আরও কয়েকজন কাজ করছেন। তারা সাধারণ মানুষকে ইতালিতে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন।
নিখোঁজ আলফাজ মিয়ার বড় ভাই মনির মিয়া বলেন, “৩০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে চারটি নৌকা ছাড়ে। এর মধ্যে একটিতে ছিল হবিগঞ্জের ৩৫ জন যুবক। সেই নৌকাটিই নিখোঁজ হয়। বাকি তিনটি ইতালিতে পৌঁছে গেছে।”
তবে অভিযুক্ত আব্দুল মুকিত মাস্টার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কোনো দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত নই।”
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। এখনো পর্যন্ত কোনো পরিবার লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”