স্টাফ রিপোর্টারঃ হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে গত একবছরে কয়েক কোটি টাকার মূল্যবান গাছ চুরি করেছে একটি চক্র। সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাচার হয়েছে এসব গাছ। ইতিমধ্যে রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ সাময়িক বরখাস্ত হলেও বহাল তবিয়তে আছেন সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরা। এরমাঝে আছেন গাছ পাচারের নেতৃত্ব দেওয়া জগদীশপুর বিট কাম চেক স্টেশন কর্মকর্তা গোলাম কাদির।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে অন্তত ৫ কোটি টাকার সেগুন, চাপালিশ সহ মূল্যবান গাছ চোর চক্রের কাছে বিক্রি করেছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট নূর মোহাম্মদ, তেলমাছড়া বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ও বন রক্ষক সুমন বিশ্বাস।। এসব গাছ রাতের আধারের কেটে ট্রাক যোগে ঢাকার সাভার সহ আশপাশের এলাকায় পাচার করেছে তারা। এই পাচার চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন জগদীশপুর চেক স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কাদির। যার ফলে শত শত অবৈধ চোরাই কাঠ বুঝাই গাড়ি গেলেও জগদীশপুর চেক স্টেশনে একটি গাড়িও আটক করা হয়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জগদীশপুর চেক স্টেশন কর্মকর্তা গোলাম কাদির চোরচক্রের সাথে চুক্তি করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব গাড়ি পাস দিয়েছেন। প্রতিটি টিপি (ট্রানজিট পাস) বিহীন চোরাই কাঠ বুঝাই গাড়ির বিপরীতে তিনি ঘুষ নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা করে। ফলে অবাধে পাচার হয়েছে গাছ, উজার হয়েছে জাতীয় উদ্যান।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বনের গাছ বিক্রি, স্ট্রিপ বাগানের টাকা লুপাট ও সরকারি নার্সারির চারা বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ সহ নানান অভিযোগ রয়েছে। এদিকে চেক স্টেশনে এক বছরের অধিক সময় দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকলেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে দেড় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি ।
এ বিষয়ে জগদীশপুর চেক স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কাদিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ করে বক্তব্য দিবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও তেলমাছড়া বনের গাছ চুরির অভিযোগে চার বন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে স্বেচ্ছাসেবক বন্যপ্রাণী সংগঠন পাখি প্রেমিক সোসাইটির আহ্বায়ক মুজাহিদ মসি হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যা বর্তমানে হবিগঞ্জ পিবিআই তদন্ত করছে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গাছ চুরি ও পাচার কাজে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশবাদীরা।